ফুলকপির ১৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
সূচিপত্রঃ ফুলকপির যাবতীয় গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন
ফুলকপির উপকারিতা ও অপকারিতা
ফুলকপির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে ফুলকপির যাবতীয় ভালো দিকগুলো এবং খারাপ দিকগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। ফুলকপি আমাদের শরীরের অনেক রোগ বালাই দূর করার জন্য ভূমিকা রাখে। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হলেও এটির আবার কিছু খারাপ দিক রয়েছে। যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আজকের এই পর্বে তাই ফুলকপির ভালো এবং খারাপ উভয়ই দিকগুলোই চলুন জেনে আসি।
ফুলকপির উপকারিতা গুলোঃ
- ফুলকপিতে ভিটামিন সি, বিটাক্যারোটিন, কোয়ারসেটিন উপাদান রয়েছে। যেগুলো বয়স হওয়ার আগে দেহে বয়সের ছাপ পড়া রোধ করতে সহায়তা করে।
- ফুলকপি ফাইবার এর ভালো উৎস হওয়ায় এটি খাওয়ার ফলে হজম প্রক্রিয়া অনেক উন্নত হয়।
- ফুলকপিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আরো অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের শরীরকে বিষমুক্ত করতে সহায়তা করে থাকে।
- ফুলকপিতে রয়েছে কোলাইন। যেটি ভিটামিন বি সমৃদ্ধ। তাই ফুলকপি খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- ফুলকপিতে রয়েছে সালফারের একটি যৌগ উপাদান। যেটি শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করতে ভূমিকা রাখ।
- ফুলকপি খাওয়ার ফলে সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- ফুলকপিতে ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
- ফুলকপিতে ভিটামিন কে রয়েছে যেটি রক্তের ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্ত জঁমাট বাধা প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে থাকে।
- ফুলকপিতে মাত্র ২৫ ক্যালোরি রয়েছে। যা ওজন কমানোর জন্য অনেক বেশি কার্যকরী।
- আমাদের ফুসফুস ভালো রাখতে ফুলকপি সহায়তা করে থাকে।
- রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে ফুলকপি খেতে পারেন।
- ফুলকপিতে থাকে ভিটামিন এ। যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।
- ফুলকপি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে হয়ে থাকা নানা ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধ হয়ে থাকে।
- ফুলকপিতে অধিক পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করে থাকে।
- ফুলকপি খাওয়ার ফলে পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে।
গর্ভাবস্থায় ফুলকপি খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় ফুলকপি খাওয়া যাবে কি এ সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে গর্ভবতী মায়েরা ফুলকপি খেতে পারবেন কিনা তা সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব।গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের খাবারের দিকে নজর দিতে হয়। কেননা এই সময় সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন হয়। শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে ফুলকপি অন্যতম। এই সবজিটি নানা পুষ্টি গুনে ভরপুর।
এতে ৮৫% পানি রয়েছে। আরো রয়েছে সামান্য পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান। এজন্য গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের ফুলকপি খাওয়া অনেক উপকারী। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস একজন গর্ভবতী মহিলার দৈনিক শক্তির ১.৩৯% শক্তি ফুলকপি খাওয়ার ফলে পূরণ হয়ে থাকে।
এছাড়াও দ্বিতীয় তিন মাস একজন গর্ভবতী মহিলার দৈনিক শক্তির ১.৩৪ শক্তি পূরণ হয়ে থাকে। সর্বশেষ তিন মাস দৈনিক শক্তির ১.০৪% শক্তি পূরণ করতে ফুলকপি ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই এই সময় যদি খাদ্য তালিকায় ফুলকপি রাখা যায় তবে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কেননা ফুলকপিতে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার। যেটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হজমের সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় ফুলকপি গ্রহণের ফলে নবাগত শিশুর গঠনের উন্নতি সাধন হয়ে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় ফুলকপি খাওয়া নিরাপদ।
ফুলকপিতে থাকা পুষ্টিগুণ উপাদান
ফুলকপিতে থাকা পুষ্টিগুণ উপাদান সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা চেষ্টা করব ফুলকপিতে থাকা যাবতীয় পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে আপনাদের জানিয়ে দেওয়ার। ফুলকপি নানা সমৃদ্ধ। এই পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে থাকে। চলুন সেই পুষ্টি উপাদান গুলো জেনে নিই
১০০ গ্রাম ফুলকপিতে
ভিটামিন সি রয়েছে ৮০%, আইরন রয়েছে ২%, ভিটামিন বি৬ রয়েছে
১০%, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে ৩ %, ক্যালসিয়াম রয়েছে ২%, ভিটামিন ডি
রয়েছে ০%, প্রোটিন রয়েছে ১.৯ গ্রাম, পটাশিয়াম রয়েছে ২৯৯
মিলিগ্রাম, সোডিয়াম রয়েছে ৩০ মিলিগ্রাম।
ফুলকপির পরোটা রেসিপি
ফুলকপির পরোটা রেসিপি তৈরীর পদ্ধতি সম্পর্কে আজকের এই পর্বে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। ফুলকপি দিয়ে খুব সহজেই ঘরে বসে পরোটা তৈরি করা যায়। চলুন দেখে আসি কিভাবে আপনি ফুলকপি দিয়ে পরোটা তৈরি করবেন তা সম্পর্কে। এজন্য প্রথমে আপনাকে ময়দার আটা নিতে হবে। এরপর বাজার থেকে ফুলকপি কিনে এনে ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে তার ডাটাগুলো ফেলে দিয়ে ফুলগুলো কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। এবার ময়দা নিন।
তারপর এদের পানি দিন ভালোভাবে মাখতে থাকুন। এবারের সাথে মরিচ গুঁড়া, আধা বাটা, জিরা এবং চিনি দিয়ে ভালোভাবে মাখতে থাকুন। এবার ময়দা গুলো সামান্য নিয়ে গোল আকৃতি করে এতে ফুলকপির কুচিগুলো দিয়ে পরোটা তৈরি করে নিন। তারপর তা ভেজে নিন। তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে ফুলকপি দিয়ে সুস্বাদু পরোটা।
ফুলকপিতে কি কি ভিটামিন আছে
ফুলকপিতে কি কি ভিটামিন আছে এ সম্পর্কে আপনারা অনেক বেশি প্রশ্ন করে থাকেন। আজকের এই পর্বে আমরা জেনা নেওয়ার চেষ্টা করব ফুলকপিতে কি কি ধরনের ভিটামিন রয়েছে তা সম্পর্কে। ফুলকপি একটি শীতকালীন সবজি। এই সবজিটি শীতের সময় উৎপন্ন হয়ে থাকে। এই সবজিটি নানা পুষ্টি গুনে ভরপুর। এতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। যা আমাদের দেহের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণে এটি সহায়তা করে থাকে।
হোয়াইট স্টোন ফুলকপি
হোয়াইট স্টোন ফুলকপি সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা হোয়াইট স্টোন ফুলকপি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নিব। বাজারে যত ধরনের ফুলকপির জাত রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো হোয়াইট স্টোন। এই জাতটি আগস্ট মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত জমিতে চাষ করা যায়। এই জাতটি চাষ করার ৫৫ থেকে ৬০ দিনের ভেতর ফসল সংগ্রহ করা যায়।
এ জাতটির ফুলকপি গুলোর ওজন হয় ১ থেকে ১.৫ কেজি পর্যন্ত। বাজারের অন্যান্য ফুলকপি গুলোর তুলনায় হোয়াইট স্টোন ফুলকপি অনেক বেশি ভালো হয়। এই বিশেষ জাতটি কালো পচা রোগ সহজে সহ্য করে নিতে পারে। এই ফুলকপির পাতাগুলো খাড়া প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং ধবধবে সাদা রংয়ের ফুল হয়ে থাকে।
এ ফুলকপির নিচের পাতাগুলো ঘন এবং সুসজ্জিত থাকার কারণে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ পরিবহনে আনার সময় কোন ধরনের ক্ষতি হয় না। তাই আপনারা চাইলে বাজার থেকে হোয়াইট স্টোন জাতের ফুলকপি কিনে এনে রান্না করে খেতে পারেন। এছাড়াও আপনারা ফুলকপির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে উপরের আলোচনা থেকে জেনে আসতে পারেন।
আগাম ফুলকপি চাষের সময়
আগাম ফুলকপি চাষের সময় সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা আগাম ফুলকপি চাষের জন্য কি কি নির্দেশনা মানা দরকার তা আপনাদের জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। আগাম ফুলকপি চাষের জন্য প্রথমে ফুলকপির জাত নির্বাচন করতে হবে। ফুলকপির অনেকগুলো জাত রয়েছে। এই জাতগুলো থেকে ভালো মানের জাতটি সিলেক্ট করে ফুলকপির চাষের জন্য উপযুক্ত মাটিতে রোপন করতে হবে।
রোপন করার পর এগুলোর ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে। প্রয়োজনীয় যত ধরনের সার রয়েছে তা দিতে হবে। সাধারণত দেড় বিঘা জমিতে ৯ হাজার ফুলকপির চারা রোপন করা যায়। রোপন করার ৬০ দিনের ভেতর ফুলকপি গুলো সংগ্রহ করতে পারা যায়। প্রত্যেকে চারার দাম পরে মূলত ৮ থেকে ১০ টাকা। ফুলকপি সংগ্রহ করার পর এগুলো সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করা হয়ে থাকে। ফুলকপির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কেও উপরে আলোচনা করা হয়েছে। চাইলে জেনে আসতে পারেন।
ফুলকপিতে কি এলার্জি আছে
ফুলকপি খেলে কি গ্যাস হয়
ফুলকপি খেলে কি গ্যাস হয় এ ধরনের প্রশ্ন আপনারা প্রায় করে থাকেন। আজকের এই পর্ব থেকে আমরা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করব ফুলকপি খাওয়ার ফলে আসলে কি গ্যাস হয় না হয় না তা সম্পর্কে। ফুলকপি শীতকালীন একটি সবজি। এই সবজিটি মূলত শীতকালেই পাওয়া যায়। এ সবজিটি নানা পুষ্টি গুণে ভরপুর।
এই সবজিটি খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের নানা উপকার হয়ে থাকে। কিন্তু সবচাইতে বড় কথা হলো এই সবজিটি খাওয়ার ফলে গ্যাস হতে পারে। কখন গ্যাস হবে এমন প্রশ্ন আসতে পারে? ফুলকপি আপনি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত খান তবেই কেবল গ্যাসের সম্ভাবনা রয়েছে। আসল কথা কি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
নিয়ম মেনে খেলে সঠিক জিনিসের সঠিক পুষ্টি পাওয়া সম্ভব হয়। ফুলকপি ঠিক তেমনি একটি সবজি যেটি সঠিক মাত্রায় খাওয়ার ফলে নানা ধরনের উপকারিত হয়। তবে যদি আপনি অতিরিক্ত এটি খান তবে আপনার গ্যাস, এসিডিটি সহ বদহজনের সমস্যা হতে পারে। তাই প্রয়োজন মত ফুলকপি খাওয়ার চেষ্টা করুন আশা করছি এর গুনাগুন গুলো পেয়ে যাবেন।
রিটেক্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url