লাউ এর ১২টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
সূচিপত্রঃ লাউয়ের যাবতীয় গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন
লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা
লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা চেষ্টা করব লাউয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার। প্রতিটি জিনিসেরই একটি ভাল দিক থাকে একটি খারাপ দিক থাকে। লাও যেমন অনেক উপকারী। এটি খাওয়ার ফলে যেমন অনেক ধরনের উপকারিতা হয়ে থাকে ঠিক তেমনি এর কিছু খারাপ দিক রয়েছে যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। চলুন এবার আমরা আর কথা না বাড়িয়ে এর ভালো দিক এবং খারাপ দিক দেখে আসি।
লাউ এর উপকারিতাঃ
- লাউয়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস উপাদান থাকার কারণে আমাদের শরীরের ঘামজনিত লবণের ঘাটতি পূরণে এটি সহায়তা করে। এছাড়াও এটি আমাদের দাঁত ও হাড়কে মজবুত করতে এর বড় ভূমিকা রাখে।
- লাউয়ে পটাশিয়াম ও ফাইবার রয়েছে। এটি আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এক বিশাল ভূমিকা রাখে।
- লাউ ফাইবার সমীদ্ধ। যার কারণে আপনি যদি এটি নিয়মিত খান তবে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
- লাউ পাতার তরকারি আমাদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, সেই সাথে মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে এবং ঘুমের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে।
- নিয়মিত লাউ খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি এবং পেট ফাঁপার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- আপনি যদি লাউয়ের সবজি খান। তবে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে।
- লাউয়ের আরেকটি বড় গুণ হলো এটি রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- লাউ এ ক্যালোরির পরিমাণ এবং চর্বি খুবই কম থাকে। যার ফলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
- লাউ ত্বকের ভিতর পরিষ্কার করতে ভূমিকা রাখে। সেই সাথে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে ভূমিকা রাখে।
- যাদের জন্ডিস ও কিডনি সমস্যা রয়েছে। তারা চাইলে লাউ খেতে পারেন। এই ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকরী।
- লাউ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- চুলের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে লাভ অত্যন্ত কার্যকরী।
লাউ এর অপকারিতাঃ
যাদের লাউ খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা হয়। তারা লাউ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কোনো জিনিসই অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়। লাউ তার ব্যতিক্রম নই। আপনি যদি অতিরিক্ত লাউ খান তবে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে। এছাড়াও লাউ খাওয়ার ফলে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পাচন শক্তি সমস্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে পেট ব্যথা এবং বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
লাউ খাওয়ার ফলে কিছু মানুষের বেলায় গ্যাসের সমস্যা হতে দেখা যায়। আর সর্বশেষ লাউ খাওয়ার আগে যারা ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন, তারা বিশেষ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ডাক্তার যদি খেতে বলে তাহলে খাবেন। আর নাতো নয়। লাউয়ের উপকারিতায় বেশি। সেই রকম কোন অপকারিতা নেই বললেই চলে।
গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনার প্রশ্ন করে থাকেন। আজকের এই পর্বে আমরা গর্ভাবস্থায় একজন মা লাউ খাওয়ার ফলে কি ধরনের উপকারিতা পাবে চলুন তা জেনে আসি। গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মাকে এটি হাইড্রেট রাখতে ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও লাউ যেহেতু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সেহেতু এটি একজন গর্ভবতী মায়ের ত্বকের কোষ গুলোকে সুরক্ষিত রাখতে ভূমিকা পালন করবে।
এজন্য একজন গর্ভবতী মা যদি গর্ভাবস্থায় খাদ্য তালিকায় লাউ যুক্ত করতে পারে। তবে নবগত শিশুর জন্য অনেক উপকারিতা বয়ে আনবে। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। যার কারণে এটি খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়েদের দেহের পানির ঘাটতি পূরণ হবে এবং দেহে প্রচুর পরিমাণে শক্তি পাবে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়ার ফলে নবাগত শিশুর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বলা যায় যে গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে।
লাউ এর পুষ্টি উপাদান
লাউ এর পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা লাউয়ের যাবতীয় পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। লাউ নানা রকম পুষ্টি গুনে সমৃদ্ধ। যার ফলে এই পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের শরীরের যাবতীয় অসুখ বিসুখ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। চলুন দেখে নেই এর প্রশ্নগুলোঃ
১০০ গ্রাম লাউ এ-
খাদ্যশক্তি রয়েছে ৬৬ কিলোক্যালরি, প্রোটিন রয়েছে ১.১ গ্রাম, শর্করা
রয়েছে ১৫.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম রয়েছে ২৬ গ্রাম, ফসফরাস রয়েছে
১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি রয়েছে ১০.০৩ মিলিগ্রাম, পানি রয়েছে
৮৩.১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট রয়েছে ২.৫ গ্রাম। এছাড়াও
এতে ম্যাগনেসিয়াম, ফ্যাটি এসিড এবং জিংক এর মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ
উপাদান রয়েছে।
লাউ খেলে কি ওজন কমে
লাউ খেলে কি ওজন কমে এই সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা চেষ্টা করব লাউ খাওয়ার ফলে কি সত্যিই ওজন কমে না কমে না তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার। আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা শরীরের বাড়তি ওজন নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত। তারা তাদের এই বাড়তি ওজন খুব সহজেই দূর করতে পারে।
তারা চাইলে লাউ খেতে পারে। কেননা লাউ এ রয়েছে নানা প্রকার পুষ্টি উপাদান। যেমন আইরন ভিটামিন ও পটাশিয়াম। এই উপাদান হলো শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও লাউ এ ক্যালরি ও চর্বির পরিমাণ খুবই কম থাকে। যার কারণে এটি শরীরের বাড়তি মেদ পোড়াতে অনেক বেশি কাজ করে থাকে। যার ফলে খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
তাহলে লাউ খেলে কি ওজন কমানো যায়? এই প্রশ্নের উত্তর হল হ্যাঁ, লাউ খাওয়ার ফলে সত্যিই ওজন কমানো যায়। এছাড়াও উপরের আলোচনাতে লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আপনার মন চাইলে জেনে আসতে পারেন।
লাউ এর বিচির উপকারিতা
লাউ এর বিচির উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের পর্বে আমরা চেষ্টা করব লাউয়ের বিচির যাবতীয় গুণাগুণ গুলো সম্পর্কে আপনাদের জানানোর। লাউয়ের বীজে রয়েছে নানা পুষ্টি উপাদান। লাউ যদি কচি হয় তাহলে এর বীজ রান্না করে খেতে পারেন। রান্না করা ছাড়াও এমনিতেও খেতে পারেন লাউয়ের বীজ।
সেই সাথে কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক বেশি সহজ হবে। এছাড়াও লাউয়ের বীজে ভিটামিন এ থাকে। যেটি আমাদের চোখের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে অনেক বেশি কাজ করে থাকে। এছাড়াও লাউয়ের বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে।
এজন্য আপনারা লাউয়ের বীজগুলো না ফেলে তা শুকিয়ে নিন। তারপর শুকানো হলে এর সাথে জলপাই তেল, লবণ, গোলমরিচ দিয়ে ভালো ভাবে মিস করে নিন। এরপর তা কিছুক্ষণ বেকিং করুন। ঠান্ডা হলে এগুলো মজা করে খেতে পারেন।
লাউ খেলে কি ঠান্ডা লাগে
লাউ খেলে কি ঠান্ডা লাগে এ ধরনের প্রশ্ন অনেককেই করতে দেখা যায়। আজকের এই পর্বে আমরা লাউ খাওয়ার ফলে সত্যিই কি ঠান্ডা লাগে কিনা তা সম্পর্কে জেনে নিব। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। আর এই সবজিটি অনেক গুণে ঠান্ডা। যার কারণে যখন গরম পড়বে তখন আপনারা লাউ খেতে পারেন।
এতে করে আপনাদের শরীর এবং মন ফুরফুরে হবে। মাথা ঠান্ডা থাকবে, যার ফলে কাজ করার প্রতি মনোযোগ পাবেন। লাউ এ রয়েছে ৯৬% পানি। যেটি আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে অনেক বেসি ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য আপনারা চেষ্টা করবেন যখন অতিরিক্ত গরম পড়বে, তখন লাউয়ের তরকারি বেশি খাওয়া।
এতে করে গরম থেকেও বাঁচা যাবে এবং একই সাথে শরীর ও মস্তিষ্কও ঠান্ডা থাকবে। এছাড়াও আমরা লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনাতে বিস্তারিত ভাবে আপনাদের জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। চাইলে জেনে নিতে পারেন।
লাউ এর জুস কিভাবে বানায়
লাউ এর জুস কিভাবে বানায় এ সম্পর্কে আপনারা প্রশ্ন করে থাকেন। আজকের এই পর্বে আমরা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করব আপনি কিভাবে খুব সহজে লাউ দিয়ে জুস তৈরি করতে পারবেন। এজন্য প্রথমে আপনাকে লাউ নিয়ে আসতে হবে। তারপর লাউয়ের খোসা গুলো ছাড়িয়ে ফেলতে হবে। এরপর লাউ টিকে কুচি কুচি করে কেটে ব্লেন্ডারে দিয়ে দিতে হবে, তার সাথে তুলসী পাতা, আদা বাটা, গোল মরিচের গুঁড়ো এবং হাফ গ্লাস পরিমাণ পানি।
এরপর আপনি সবগুলো উপকরণকে ব্লেন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিবেন। এটি করা হয়ে গেলে তৈরিকৃত মিশ্রণটি একটি ছাঁকনিতে দিয়ে ভালোভাবে রস বের করে ফেলুন। রস বের করে এতে শুধু লেবু মিস করে দিন। তাহলেই হয়ে যাবে লাউয়ের জুস। এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরের বাড়তি ওজন খুব সহজে কমে যাবে।
এছাড়াও এটি, সুগার, পেশার এবং কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং যাদের খাবার ঠিকভাবে হজম হয় না তাদের জন্য এটি এক মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে থাকে। উপরের আলোচনাতে লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। চাইলে জেনে নিতে পারেন।
রিটেক্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url