বিটের ১৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
সূচিপত্রঃ বিটের যাবতীয় গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন
বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা
বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে বিটের যাবতীয় ভালো দিক এবং খারাপ দিকগুলো জেনে নিব। বিট নানা পুষ্টি গুনে ভরপুর। এটি খাওয়ার ফলে আমাদের যেমন অনেক ধরনের উপকারিতা হয়ে থাকে ঠিক তেমনি এটি খাওয়ার ফলে আমাদের স্বাস্থ্যের কিছু ক্ষতিও হয়ে থাকে। চলুন তাই এর ভালো দিকগুলো এবং খারাপ দিক গুলো কি তা দেখে আসি।
বিটের উপকারিতা গুলোঃ
- বিটে নাইট্রিক অ্যাসিড ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। যার ফলে এটি আমাদের হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে থাকে।
- বিটে উচ্চ আঁশ রয়েছে। যার ফলে এটি খাওয়ার ফলে পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে এবং পেটের যাবতীয় জ্বালাপোড়া সমস্যা কমিয়ে থাকে।
- বিটের ফোলেট ও বেটালেইন এক ধরনের উপাদান রয়েছে। যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
- বিটের মধ্যে রয়েছে পিগমেন্ট। যেটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে।
- বিটের মধ্যে ফলিক এসিড ও আয়রন থাকায় এটি অ্যানিমিয়া হওয়া থেকে মুক্তি প্রদান করে থাকে।
- বিট খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে।
- শরীরের বাড়তি ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত বিট খেতে পারেন।
- মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল সচল রাখতেও বিট ভূমিকা পালন করে।
- বাতের ব্যথা প্রতিরোধ করার জন্য বিট অনেক উপকারী।
- বিট খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়।
- বিট খাওয়ার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
- বিট খাওয়ার ফলে দেহে শক্তি ও কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
-
বিটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। যা রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য কাজ করে
থাকে।
- বিটের মধ্যে রয়েছে লুটেইন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা চোখের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে কাজ করে থাকে।
-
বিটের জুস খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে।
বিটের অপকারিতা গুলোঃ
বিট আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী ঠিক তেমনি এর কিছু খারাপ দিক আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বাজে প্রভাব ফেলে। যাদের এমনিতেই রক্তচাপ কম তাদের বিট খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা বিট খাওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে থাকে। আর আপনি যদি আবারো এটি খান তবে রক্তচাপের সমস্যায় পড়ে যাবেন। বিডি থাকা অক্সালেট আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ।
বিট খাওয়ার ফলে কারো কারো ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও বিট খাওয়ার ফলে কারো কারো এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যাদের বিট খাওয়ার ফলে এলার্জির সমস্যা হয় তারা বিট খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন। নিয়মিত বিট না খেয়ে সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন বিট খাওয়ার চেষ্টা করুন। এছাড়াও যারা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। তারা বিট খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
বিটরুট পাউডার এর উপকারিতা
বিটরুট পাউডার এর উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা বিটরুট পাউডারের যাবতীয় উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। বিটরুট পাউডার নাইট্রেট সমিদ্ধ হওয়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপ, এনজাইনা এবং হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য অনেক উপকারী। এই পাউডার খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের কোষের ক্ষতি থেকে এটি রক্ষা করে থাকে।
এছাড়াও বিটরুট পাউডার খাওয়ার ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়ে থাকে। কেননা এতে বিটালিনও উপাদান রয়েছে। যা ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়া কোষ গুলোকে ধ্বংস করতে কাজ করে থাকে। বিটরুট পাউডার খাওয়ার ফলে রক্তের শিরা গুলো পরিশুদ্ধ হয় এবং রক্ত প্রবাহ অনেক পরিমানে উন্নত হয়। আবার এটি খাওয়ার ফলে হার্ট অ্যাটাক এর প্রবণতা অনেকাংশেই কমে যায়। তাই সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন বিটরুট পাউডার খেতে পারেন।
বিটে থাকা পুষ্টি উপাদান
বিটরুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম
বিটরুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা বিটরুট পাউডার কিভাবে খেলে ভালো হবে তা সম্পর্কে এ টু জেড জেনে নিব। আপনারা সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন বিটরুট পাউডার এক চামচ করে খেতে পারেন। এটি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের পুষ্টির ৩%-১৬% পুষ্টি আমরা বিটরুট পাউডার থেকেই পেয়ে যাই।
এক চামচ বিটরুট পাউডার খাওয়ার ফলে পুরো একটি বিটরুট খাওয়ার পুষ্টি পেয়ে থাকি। আপনি চাইলে বিটরুট পাউডার কফি বা চকলেটের সাথে মিস করে খেতে পারেন। এটি অনেক স্বাস্থ্যকর। বিটরুট আপনি ফলের সাথে মিশিয়ে জুস করেও খেতে পারেন। তাহলেই আপনি বিটরুট পাউডারের যাবতীয় গুনাগুন গুলো খুব সহজেই পেয়ে যেতে পারবেন।
বিট দিয়ে রূপচর্চা করার পদ্ধতি
বিট দিয়ে রূপচর্চা করার পদ্ধতি সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা চেষ্টা করব বিটকে কিভাবে কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার ত্বকের যত্ন নিতে পারবেন তা সম্পর্কে। বিটরুট এর প্রথমে রস বের করে নিন। এরপর এই রসের সাথে দুধ ও মধু মেশানোর পর মিশ্রণটিতে তুলার মাধ্যমে মিশ্রণটি নিয়ে ডার্ক সার্কেলের উপর লাগাতে থাকুন।
তবে আপনার ত্বক থেকে যাবতীয় ব্রণ খুব সহজে দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও আপনি শসার রস ও বিটরুট এর রস একসাথে মিশ্রিত করার পর খেয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ত্বকের বলিরেখা খুব অল্প সময়ের মধ্যে দূর হয়ে গেছে। এভাবে আপনি বিটকে কাজে লাগিয়ে ত্বকের রূপচর্চা করতে পারবেন।
বিটরুট দিয়ে চুল কালার
বিটরুট দিয়ে চুল কালার উপায় সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা বিটরুট দিয়ে কিভাবে চুল কালার করা যায় তা জেনে নিব। এজন্য আপনাকে প্রথমে বাজার থেকে বিটরুট কিনে নিয়ে আসতে হবে। এরপর সেগুলোকে ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলতে হবে।
এরপর একটি ব্লেন্ডারে টুকরোগুলোকে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করার পর পুরো অংশটুকুকে ছাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে রস বের করে নিতে হবে। এই রসটি এবার একটি কাপে রেখে দিন। এরপর একটি পাত্র নিন। তাতে পানি নিয়ে গরম করতে থাকুন। এরপর পানি গরম হয়ে এলে তাতে বিটরুট এর জুস এবং তিসি সামান্য পরিমাণে দিয়ে দিন। এরপর জাল করতে থাকুন। জাল করতে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত না এই মিশ্রণটিকে জেলের মত দেখাচ্ছে। যখন জেলের মতো দেখাবে তখন তা নামিয়ে ঠান্ডা করে দিন।
এবার মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে গেলে চুলে লাগাতে থাকুন। দেখবেন চুলের যাবতীয় সমস্যা থেকে শুরু করে খুব সহজেই চুল কালার হয়ে যাবে। এভাবে আপনারা বিটরুটকে কাজে লাগিয়ে চুলকে কালার করে নিতে পারবেন। এছাড়াও বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বিটরুট পাউডার এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে উপরের আলোচনাটি পড়ে আসতে পারেন।
বিটরুট দিয়ে ফেসপ্যাক
বিটরুট দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরীর পদ্ধতি সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা বিটরুট দিয়ে কিভাবে ফেসপ্যাক তৈরি করা যায় তা সম্পর্কে এ টু জেড জেনে নেব। এজন্য প্রথমে আপনাকে এক চামচ বেসনের সঙ্গে এক চামচ বিটরুট এর রস এবং এক চামচ টক দই মিশ্রিত করে ফেসপ্যাক তৈরি করতে হবে।
এই মিশনটির সঙ্গে এক চামচ গোলাপের পাপড়ি বাটা যোগ করে দিন। এবার মিশ্রণটি ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে আধা ঘন্টার মত রেখে দিন। এরপর গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। তাহলে আপনার ত্বক কোমল, মসৃণ এবং উজ্জল হবে। আপনি চাইলে আরো একটি ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। এজন্য আপনাকে অর্ধেক চামচ কমলা লেবুর খোসার পাউডার নিতে হবে।
এর সাথে এবার দুই চামচ বিটের রস মিশাতে হবে। ভালোভাবে দুইটি উপকরণকে একসাথে মিস করার পর আপনার ত্বকে ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর তা ধুয়ে ফেলুন। তাহলে দেখবেন আপনার ত্বকের যাবতীয় ছোট ছোট সমস্যা গুলো দূরে যাবে। এছাড়াও উপরের আলোচনাতে বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিটরুট দিয়ে জুস বানানোর রেসিপি
বিটরুট দিয়ে জুস বানানোর রেসিপি সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। চলুন আজকের এই পর্বে বিটরুট এর জুস বানানো পদ্ধতি দেখে আসি। এজন্য প্রথমে আপনাকে কিছু ডালিম এবং সাথে বিট নিতে হবে। এরপর দুই কাপ বিট এবং এক কাপ ডালিমের বীজ নিতে হবে। সাথে নিতে হবে তিন চামচ লেবুর রস এবং বিট লবণ।
দেখবেন আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে গেছে। এভাবে আপনি খুব সহজেই আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। এছাড়াও উপরের আলোচনাতে বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চাইলে জেনে আসতে পারেন।
বিটরুট দিয়ে লিপবাম তৈরি
বিটরুট দিয়ে লিপবাম তৈরি সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। চলুন আজকের পর্বে বিটরুট দিয়ে কিভাবে লিমবাম তৈরি করা যায় চলুন তা জেনে আসি। এটি তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি পাত্র নিতে হবে। সেই পাত্রে এবার বিটরুটের তিন চামচ রস নিন। এই রসে এক চামচ ভ্যাসলিন দিয়ে দিন। তারপর এই রসেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল যোগ করে দিন।
এই তিনটি উপকরণকে একসাথে মিশ্রিত করুন। এই মিশ্রিত পেস্টটি একটি ছোট পাত্রে রেখে দিন। এরপর তা এক থেকে দুই ঘন্টা মত ফ্রিজে ভরে রেখে দিন। এভাবে আপনি খুব সহজে ঠোঁটের জন্য লিমবাম তৈরি করতে পারবেন। এই লিমবাম ব্যবহার করার ফলে আপনার ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফেটে যাওয়া প্রতিরোধ হবে।
এছাড়াও বিটরুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ঠোঁটকে সুরক্ষিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকবে। এছাড়াও আপনারা যদি বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা না জেনে থাকেন। তাহলে উপরের আলোচনা থেকে জেনে আসতে পারেন।
রিটেক্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url