ধনে পাতার ৯টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন
সূচিপত্রঃ ধনেপাতার যাবতীয় গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন
ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন
ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। চলুন আজকে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে ধারণা নিয়ে আসি। ধনেপাতা পুষ্টিগুণে ভরপুর। কোন খাবারকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ধনেপাতার ব্যবহার হয়ে থাকে।
রান্নার স্বাদ বাড়ানোর জন্য ধনেপাতা ব্যবহার করা হলেও এর রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা। আবার ধনেপাতার এমন কিছু অপকারিতা হয়েছে যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আজকের এই পর্বে আমরা ধনেপাতার ৯টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই।
ধনে পাতার উপকারিতাঃ
- আপনি যদি নিয়মিত ধনেপাতার রসের সঙ্গে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খান, তবে খুব সহজেই শরীরের বাড়তি ওজন কমে আসবে এবং সেই সাথে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে।
-
ধনেপাতায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে। যার কারণে এটি হাড়ের
ক্ষয় রোধ করে এবং হাড়কে মজবুত করতে সহায়তা করে থাকে।
-
ধনেপাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। এজন্য আপনি নিয়মিত
ধনেপাতা খেতে পারেন।
-
ধনেপাতা দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। কেননা ধনেপাতায় রয়েছে
ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই। এগুলো দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে কাজ করে
থাকে।
-
নিয়মিত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে এলডিএল অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়
এবং এইচডিএল অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
-
ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে ধনেপাতা কাজ করে থাকে। ধনেপাতার এন্টিমাইক্রোবিয়াল,
অ্যান্টিসেপটিক এবং এন্টিফাঙ্গাল ত্বককে ঠান্ডা এবং শীতল করতে ভূমিকা পালন
করে থাকে।
- ধনেপাতায় অতিরিক্ত মাত্রায় আয়রন থাকার কারণে এটি রক্তস্বল্পতা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
-
নিয়মিত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। আর এর ফলে গ্যাস, বদহজম ও
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়।
- ধনেপাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে পাকস্থলীতে ক্যান্সার হাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ধনে পাতার অপকারিতাঃ
- ধনেপাতা খাওয়ার ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হয়। এজন্য যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে, তাদের ধনেপাতা খাওয়া ঠিক নয়।
-
প্রচুর পরিমাণে ধনেপাতা খাওয়া ঠিক নয়। কেননা এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ঠোঁট,
মাড়ি এবং গলা ব্যথার সমস্যা হয়। ধনেপাতায় এসিটিক উপাদান থাকার কারণে এ
ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।
-
অতিরিক্ত পরিমাণে ধনেপাতা খাওয়া ঠিক নয়। কেননা অতিমাত্রায় ধনেপাতা খাওয়ার
ফলে নিম্ন রক্তচাপের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
-
অতিরিক্ত পরিমাণে ধনেপাতা খাওয়ার ফলে লিভারের কার্যক্ষমতা খারাপের দিকে ধাবিত
হয়।
-
ধনেপাতা খাওয়ার ফলে কারো কারো ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা হয়। এই সময় শরীরে
চুলকানি এবং জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা হয়ে থাকে।
-
গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত পরিমাণে ধনেপাতা খাওয়া ঠিক নয়। কেননা এটি প্রজনন
গ্রন্থির কার্যক্ষমতাকে বিকল্প করে দেয়। আর এর ফলে ভ্রুণের মারাত্মক ক্ষতি
সাধন হয়ে থাকে।
-
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে বুকে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া শুরু করে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে ধনেপাতা খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা তৈরি হয়। আর এর ফলে বমি হওয়া, পেট খারাপ হওয়ার মতো সমস্যায় পড়তে হয়।
-
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিলাতি ধনে পাতার উপকারিতা
বিলাতি ধনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী। চলুন আজকে আমরা বিলাতি ধনেপাতার যাবতীয় গুনাগুন সম্পর্কে জেনে আসি। ধনে পাতা ও বিলাতি ধনেপাতার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। তবে সাধারণ কিছু পার্থক্য রয়েছে।
সেগুলো হলোঃ ধনেপাতা পাতলা ধরনের হয়ে থাকে। অন্যদিকে বিলাতি ধনেপাতার চতুর্দিকে চেরাচেরা ধরনের হয়ে থাকে। ধনেপাতার আকার খাটো আকৃতির হয়ে থাকে। অন্যদিকে বিলেতি ধনেপাতা লম্বা আকৃতির হয়ে থাকে। এছাড়াও ধনেপাতার গাছে কান্ড দেখা যায়। কিন্তু বিলাতি ধনে পাতায় কান্ড দেখা যায় না।
বিলাতি ধনে পাতার গুণাবলীঃ
- ডায়রিয়া সমস্যা থেকে মুক্তি দেই।
- ম্যালেরিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
- সাপে কামড়ানো রোগীর চিকিৎসায় এটি ভূমিকা রাখে।
- পাকস্থলীর জ্বালাপোড়া সমস্যা দূর করে।
- জ্বর সাড়িয়ে তুলতে কাজ করে।
- হাইপার টেনশন থেকে মুক্তি দেয়।
- অ্যাজমা সমস্যায় এটি ব্যবহৃত হয়।
- কৃমি হলে এটি প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
ধনে পাতার পুষ্টিগুণ
ধনে পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী। চলুন আজকে আমরা ধনেপাতার যাবতীয় পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিই। ধনেপাতা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে।
ভিটামিন সি | ১৫% |
আইরন | ৪% |
ভিটামিন বি৬ | ৫% |
ম্যাগনেসিয়াম | ৩% |
ক্যালসিয়াম | ৩% |
ভিটামিন ডি | ০% |
সোডিয়াম | ২৮ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ১৯৪ মিলিগ্রাম |
সুগার | ০.৮ গ্রাম |
কোলেস্টেরল | ০ মিলিগ্রাম |
ধনে পাতার রসের উপকারিতা
ধনে পাতার রসের উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। চলুন আজকের এই পর্বে ধনেপাতার রসের যাবতীয় গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে আসি। ধনেপাতার পাশাপাশি ধনেপাতার রসও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক উপকারী। ধনেপাতার রস আপনি যদি ব্যবহার করেন তবে ত্বক এবং ঠোঁট আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
অনেক সময়ই ধূমপান করার ফলে ঠোঁট কালো হতে দেখা যায়। এই সময় আপনি যদি ধনেপাতার রস ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে। ধনেপাতার রস খাওয়ার ফলে কিডনির যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে যায়। আপনি যদি ওজন কমাতে চান তবে নিয়মিত ধনেপাতার রস সেবন করার চেষ্টা করুন। এতে করে খুব সহজে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে। ধনেপাতায় পটাশিয়াম থাকার কারণে এটি হার্টের সমস্যা দূর করে থাকে।
যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ধনেপাতার রস খেতে পারেন। ধনেপাতার রস তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে ধনেপাতা নিয়ে তা কুচি কুচি করে কেটে ফেলতে হবে। তারপর সেগুলো গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন। এবার প্রয়োজন মত লেবু ও লবণ মিশিয়ে দিন। তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে ধনেপাতা রস। ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এজন্যই আমাদের ভালোভাবে জেনে নেওয়া দরকার।
ধনে পাতার উপকারিতা চুলের জন্য
ধনে পাতার উপকারিতা চুলের জন্য এই সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী। চলুন আজকে আমরা ধনেপাতা ব্যবহার করে কিভাবে চুলের যত্ন নেওয়া যায়? সেই সম্পর্কে জেনে আসি। ধনেপাতায় ভিটামিন কে, ভিটামিন ই রয়েছে। যেগুলো চুলের বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক কার্যকরী। ধনেপাতার রস ব্যাবহার করে চুলের যত্ন নেওয়া যায়।
ধনেপাতা সংরক্ষণের উপায়
ধনেপাতা সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। চলুন আজকে আমরা ধনেপাতা কিভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়? সে সম্পর্কে জেনে আসি। ধনেপাতা আমরা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু অনেক সময় ধনেপাতা সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। এজন্য আপনি চাইলে খুব সহজেই এটি এক বছর পর্যন্তও সংরক্ষণ করতে পারেন।
সংরক্ষণ করার পদ্ধতিঃ
- টাটকা ধনেপাতা নিন। এরপর পঁচা পাতাগুলো ফেলে দিন। তারপর একটি পাত্র নিন এবং তাতে সামান্য নুন এবং হলুদ মিক্স করুন। ধনেপাতা গুলো এবার সেই জলে এক ঘন্টা মতো ডুবিয়ে রেখে দিন।
- এবার জল থেকে পাতাগুলোকে তুলে রোদে শুকিয়ে নিন। রোদে শুকানো হলে পাতাগুলো কুচি কুচি করে কেটে ফেলুন।
- এবার পাতাগুলোকে গরম জলে দিয়ে যতক্ষণ না পর্যন্ত সবুজ রং ফ্যাকাসে হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত গরম করতে থাকুন।
- এরপর পাতাগুলোকে আবার শুকিয়ে নিন। তারপর একটি কৈাটেতে এমন ভাবে ভরে রাখুন যাতে কোন বাতাস না প্রবেশ করে।
- এগুলো কাজ সম্পন্ন হলে ডিপ ফ্রিজে ভরে দিন। আর এভাবে আপনি যদি ধনেপাতা সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে এক বছর পর্যন্ত অনায়াসে খেতে পারবেন।
ধনেপাতা খারাপ হলে কিভাবে বোঝা যায়
ধনেপাতা খারাপ হলে কিভাবে বোঝা যায় এ সম্পর্কে অনেককেই প্রশ্ন করতে দেখা যায়। চলুন আজকে আমরা ধনেপাতা খারাপ হলে আপনি কিভাবে বুঝবেন? সে সম্পর্কে জেনে আসি। ধনেপাতাকে আমরা দৈনন্দিন জীবনে খাবারের স্বাদ আরো সুস্বাদু করার জন্য ব্যবহার করে থাকি। এটি ছাড়া বলতে গেলে খাবারের স্বাদ পাওয়াই যায় না। ধনেপাতা বাজার থেকে কিনে আনার পর সংরক্ষণের উপায় জানতে হয়।
না হলে এটি খুব সহজেেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রিয় পাঠক আপনারা এটাই জানতে চেয়েছেন যে ধনেপাতা খারাপ হয়ে গেলে বুঝার উপায় কি? ধনেপাতা খারাপ হয়ে গেলে দেখবেন যে ধনে পাতার পাতাগুলি বাদামি হয়ে যাবে এবং অনেকটা শুকিয়ে যাবে। এই লক্ষণ গুলো যখন দেখবেন আপনি তখনই বুঝে যাবেন ধনেপাতাটা খারাপ হয়ে গেছে।
তাই ধনেপাতা যাতে খারাপ না হয় অন্ততপক্ষে যাতে এক বছর সংরক্ষণ করা যায়! তার উপায় না জানা থাকলে তা জেনে নিন। এতে করে আপনি দীর্ঘকাল ধরে ধনেপাতা সংরক্ষণ করে অল্প অল্প করে খেতে পারবেন। ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নেওয়ার ফলে আপনারা আপনাদের স্বাস্থ্যকে আরো সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
ধনেপাতা কাদের খাওয়া উচিত নয়
ধনেপাতা কাদের খাওয়া উচিত নয় এই সম্পর্কে অনেকে জানতে আগ্রহী। চলুন আজকে আমরা ধনেপাতা কাদের জন্য খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। সে সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিই। ধনেপাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
ধনেপাতা দিয়ে কি কি খাওয়া যায়
ধনেপাতা দিয়ে কি কি খাওয়া যায় এ সম্পর্কেও আমাদের কিছু পাঠক প্রশ্ন করে থাকে। চলুন আজকে আমরা সেইসব পাঠকদের এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরগুলো সম্পর্কে জানায়। ধনেপাতা খাবারের স্বাদকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ধনেপাতা বিভিন্ন খাবারের সাথে ব্যবহার হতে দেখা যায়। যেমন ধরেন, গরুর মাংস আপনি রান্না করলেন।
এখন যদি সেই রান্নাই পরিমাণ মতো ধনেপাতার গুড়া দিয়ে দেন তাহলে স্বাদ অনেক গুণ বেড়ে যাবে। আবার আপনি মসুর ডালের সাথে বা ডিম রান্না করলে আপনি ধনেপাতা দিয়ে দিতে পারেন। এতে করে ডিম রান্নাও মজাদার হবে। সেই সঙ্গে মুসুর ডালও খেতে খুব টেস্টি হবে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না। অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে আবার শরীরের নানা রকম ক্ষতি হতে পারে।
এজন্য গরুর মাংস, মুরগির মাংস, মসুর ডাল এবং ডিমের সাথে আপনি পরিমাণ মতো ধনেপাতার গুড়া দিয়ে রান্না করলে সেই রান্নার স্বাদ অত্যন্ত টেস্টিকর হবে। আপনি তৃপ্তিভরে খেতে পারবেন। আর আপনার যদি ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা না থাকে তাহলে অবশ্যই উপরের আলোচনা থেকে জেনে নিবেন।
রিটেক্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url