পালং শাক রেসিপি করার যাদুকরি ৩টি পদ্ধতি জেনে নিন
সূচিপত্রঃ পালং শাকের যাবতীয় গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন
পালং শাক রেসিপি করার পদ্ধতি জেনে নিন
পালং শাক রেসিপি করার পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। চলুন আজকে আমরা পালং শাক রেসিপি করার ৩টি কার্যকরী পদ্ধতি জেনে নিই।
টাঁকি মাছ দিয়ে পালং শাকের ঝোল তৈরি করার নিয়মঃ
- এই রেসিপিটি তৈরি করার জন্য আপনাকে প্রথমে পালং শাক কুচি করে কেটে তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর আপনি চুলাতে প্যান বসিয়ে তাতে সামান্য তেল দিয়ে আগে থেকে বাটা পেঁয়াজ দিয়ে দিবেন। তারপর তা ভালোভাবে ভেজে নিবেন। পেঁয়াজ ভাজা লালচে ধরনের হয়ে এলে তাতে মরিচ গুঁরা, হলুদ গুঁড়া ও প্রয়োজনমতো লবণ দিয়ে কষিয়ে নিবেন।
- এবার এই কষানো মসলায় এক কাপ পরিমাণ পানি দেন। তারপর টাঁকি মাছগুলো মশলার সাথে যুক্ত করে দশ মিনিট রেখে দেন। ভালোভাবে সিদ্ধ হয়ে গেলে মাছে থাকা কাঁটাগুলো তুলে ফেলতে হবে এবং অতিরিক্ত করে কাঁচা মরিচ চির করে ফেরে দিয়ে দিন।
- এরপরে এতে আগে থেকে কুচি করা পালং শাক দিয়ে দিন। তারপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ভালোভাবে কিছুক্ষণ রান্না করুন। যখন দেখবেন পালং শাক থেকে পানি উঠছে তখন বুঝবেন শাক সিদ্ধ হয়ে গেছে। এভাবে আরো ১০ মিনিট রেখে দেওয়ার পর শাকটা আরো ভালোভাবে সিদ্ধ হয়ে যাবে। এরপর ঝোলের জন্য কিছুটা ঝৈাল রেখে দিয়ে বাদবাকিটা মেরে দিতে হবে। আর এভাবে আপনি খুব সহজেই টাঁকি মাছ দিয়ে পালং শাকের ঝোল তৈরি করতে পারবেন।
বড়ি দিয়ে পালং শাকের রেসিপি তৈরি করার নিয়মঃ
- এই রেসিপিটি তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি প্যানে তেল দিতে হবে। তারপর সেই তেল কিছুক্ষণ গরম করে তাতে আপনার কাছে থাকা বড়িগুলো দিয়ে ভালোভাবে ভেজে নিন। ভাজা বড়িগুলো ভেঙে নিয়ে একটি পাত্রে রেখে দিন।
- এরপর প্যানে আবার তেল দিয়ে গরম করে নিন। তারপর তাতে যাবতীয় ফোড়ং দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ুন। এরপর তাতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিন এবং পেঁয়াজগুলো ভালোভাবে ভাজা হয়ে গেলে তাতে পালং শাক দিয়ে ১০মিনিট রান্না করতে থাকুন। যখন দেখবেন পালং শাক সিদ্ধ হয়ে গেছে তখন তাতে কাঁচা লঙ্কা কুচি, হলুদ গুঁড়া, আদা কুচি ও প্রয়োজনমতো লবণ দিয়ে তা ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে।
- এরপর যখন দেখবেন মসলাটিতে পানি শুকিয়ে ঘন হয়ে আসছে, তখন তাতে ভাজা বড়িগুলো দিয়ে দিন এবং কিছুক্ষণ হালকা ভাবে নাড়াঁচাড়া করুন। আর এভাবেই বড়ি দিয়ে পালং শাকের রেসিপি খুব সহজে তৈরি হয়ে যাবে।
পালং শাক দিয়ে চিংড়ি রান্নার রেসিপিঃ
- এই রেসিপিটি তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে চিংড়ি মাছে হলুদ মাখিয়ে নিতে হবে। তারপর একটি প্যানে তেল গরম করে নিয়ে তাতে পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, কাঁচা মরিচ ভেজে দিতে হবে। তারপর এতে পালং শাক দিয়ে দিন এবং প্রয়োজনমতো লবণ দিন। এরপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিন।
- এরপর যখন দেখবেন পালং শাক সেদ্ধ হয়ে গেছে তখন তাতে চিংড়ি মিশিয়ে ভাজা ভাজা করে নিন। এরপর এতে আপনি চাইলে ধনেপাতা কুচি মিশিয়ে দিতে পারেন। আর এভাবেই খুব সহজে আপনি পালং শাক দিয়ে চিংড়ির রেসিপি তৈরি করতে পারবেন।
পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে অনেকেই আগ্রহী। চলুন আজকে আমরা পালং শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি। পালং শাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী ঠিক তেমনি এর কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। এজন্য আপনাকে নিয়ম মেনে পালং শাক খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই আপনি এর ভালো দিকগুলো গ্রহন করতে পারবেন এবং খারাপ দিকগুলো বর্জন করতে পারবেন।
পালং শাকের উপকারিতাঃ
পালং শাক আমাদের স্বাস্থ্য কে ভালো রাখতে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। পালং শাকে ভিটামিন এ রয়েছে যার ফলে পালং শাক খেলে রক্তের শ্বেত কণিকা বিভিন্ন রোগ হওয়া থেকে রক্ষা করে থাকে এবং সেই সাথে ত্বকের বাইরের স্তরের আদ্রতা বজায় রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন হয়ে থাকে। পালং শাকে ক্লোরোফিল থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত তারা পালং শাক খেতে পারেন। কেননা এতে মাত্র ৭ কিলোক্যালরি ক্যালরি রয়েছে। যেটি আপনার শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সহায়তা করে থাকবে। এছাড়াও আপনি দেহের ক্লান্তি ভাব দূর করার জন্যও পালং শাক খেতে পারেন। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে ।
এগুলো থাকার কারণে আমাদের শরীরের ক্লান্তি ভাব দূরে হয়ে থাকে। পালং শাকে বিটা ক্যারোটিন থাকার কারণে এটি আমাদের চোখ ভালো রাখে এবং সেই সাথে চোখের ছানি পড়া রোধ করে। তাই আপনি বুঝতেই পারছেন পালং শাক আপনার জন্য কতটা উপকারী।
পালং শাকের অপকারিতাঃ
পালং শাক অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা পালং শাকে রয়েছে অক্সালেট। যেটি কিডনিতে পাথর হতে সাহায্য করে থাকে। এজন্য আপনার যদি কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে পালং শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পালং শাক খান তবে আপনার শরীরে বিষাক্ত প্রভাব পড়তে পারে।
এছাড়াও প্রয়োজনের অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যা, পেটের ফলাফল তৈরি হতে পারে। কেননা পালং শাকে রয়েছে উচ্চ ফাইবার। এটি এ ধরনের সমস্যা তৈরি করে থাকে। যাদের পালং শাক খাওয়ার ফলে এলার্জির সমস্যা হয়, তারা পালং শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়াও পালং শাকে পিউরিন থাকার কারণে জয়েন্টে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পালং শাকের পুষ্টিগুণ
পালং শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী। চলুন আজকে আমরা পালং শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিই। পালং শাক নানা পুষ্টিগুনে ভরপুর। পালং শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হলে নিজের ছকটি ভালোভাবে পড়ুনঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে পুষ্টিগুণ-
সোডিয়াম | ৭৯ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৫৫৮ মিলিগ্রাম |
প্রোট্রিন | ২.৯ গ্রাম |
সুগার | ০.৪ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৪৬% |
আইরন | ১৫% |
ভিটামিন B6 | ১০% |
ম্যাগনেশিয়াম | ১৯% |
ক্যালসিয়াম | ৯% |
ভিটামিন ডি | ০% |
পালং শাকে কি এলার্জি আছে
পালং শাক কি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর
পালং শাক কি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর? এ ধরনের নানান প্রশ্ন শুনতে পাওয়া যায়। আজকে আমরা পালং শাক খাওয়ার ফলে দাঁতের কি কোন ক্ষতি হয় কিনা? সে সম্পর্কে জেনে নিবো। পালং শাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারিতা বয়ে আনে। পালং শাক খাওয়ার ফলে দাঁতের ক্ষয় রোধ হয়ে থাকে।কেননা আপনি জানলে অবাক হবেন যে পালং শাকে ক্যালসিয়াম থাকে।
পালং শাকের জুসের উপকারিতা
পালং শাকের জুসের উপকারিতা রয়েছে। চলুন আজকে আমরা পালং শাকের জুস এর যাবতীয় উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি। পালং শাকে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ভিটামিন এবং খনিজ। পালং শাকে এ সকল উপাদান গুলো থাকার কারণে পালং শাক শরীরের যাবতীয় রোগ প্রতিরোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
আপনি যদি পালং শাকের সাথে বিভিন্ন রকমের উপকরণ মিশ্রিত করে খান তবে নানা প্রকার উপকারিতা মিলবে। এই ধরেন, আপনি যদি পালং শাকের সঙ্গে টমেটোর রস মিস করে জুস করে খান তবে শারীরিক দুর্বলতা থেকে শুরু করে অলসতা সবগুলোই দূর হয়ে যাবে। আবার যদি আপনি পালং শাকের সঙ্গে গাজরের রস মিস করে খান তবে রক্তস্বল্পতার সমস্যা থাকলে তা থেকে মুক্তি পাবেন।
পালং শাকের জুস নাইট্রেট সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। সর্বশেষ আপনি যদি পালং শাকের সঙ্গে শিলারি মিশ্রিত করে জুস করে খান তবে গ্যাস্ট্রিকের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এজন্য আপনি পালং শাকের জুস করে খেতে পারেন।
পালং শাকে কোন ভিটামিন থাকে
পালং শাকে কোন ভিটামিন থাকে? এ ধরনের প্রশ্ন অনেকে করে থাকে। চলুন এ সম্পর্কে জেনে নিই। পালং শাক বিভিন্ন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এ সকল পুষ্টিগুণ আমাদের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার পেছনে পালং শাকে থাকা ভিটামিনের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
এ সকল ভিটামিন গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে। এ ধরনের ভিটামিন গুলো আমাদের শরীরের ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করতে কাজ করে থাকে। এই ভিটামিন গুলোর কারণে আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি হয়ে থাকে এবং সেই সাথে ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে।
তাই আমাদের উচিত পালং শাক খাওয়া। কেননা এটি খাওয়ার ফলে আমরা আমাদের শরীরে এ ধরনের ভিটামিন গুলো পেয়ে থাকবো। আর এই সকল ভিটামিন গুলো পাওয়ার জন্য পালং শাক রেসিপি করার পদ্ধতি গুলো জেনে নিতে পারেন।
পালং শাক কি দিয়ে খায়
পালং শাক কি দিয়ে খায়? অনেকেরই এ ধরনের প্রশ্ন থাকে। চলুন আজকে আমরা এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে নিই। আপনি চাইলে পালং শাক বিভিন্ন সবজির সাথে রান্না করে খেতে পারেন। এই যে ধরুন, আপনি চাইলে পালং শাক এবং ডাল একসঙ্গে মিস করে খেতে পারেন। আবার আপনি চাইলে বড়ি এবং পালং শাক একসঙ্গে রান্না করে খেতে পারেন। এই রান্নাটি অনেক মজাদার হয়ে থাকে।
পালং শাক খেলে কি পেট ব্যথা হয়
পালং শাক খেলে কি পেট ব্যথা হয়? এ ধরনের প্রশ্ন প্রায় শোনা যায়। চলুন আজকে আমরা এই সম্পর্কে জেনে নিই। পালং শাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী ঠিক তেমনি আপনি যদি সঠিক নিয়ম না মেনে পালং শাক খেয়ে থাকেন তবে নানা রকম সমস্যায় পড়বেন।
এর মধ্যে একটি সমস্যা পেট ব্যাথা। পালং শাক পরিমান মতো খাওয়ার ফলে আমাদের স্বাস্থ্যের নানা উপকারিতা হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পালং শাক খান তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সহ পেটে ব্যথার মতো ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
পালং শাকে থাকে ফাইবার। আর এটি অতিরিক্ত খাওয়া হলে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে। তাই বলা যায় যে পালং শাক খেলে কি পেটে ব্যথা হয়? এর উত্তর হলো হ্যাঁ, আপনি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পালং শাক খেয়ে থাকেন তবে পেট ব্যথা সহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবেন।
রিটেক্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url